বাক্‌ ১৫১ ।। সুবর্ণকান্তি উত্থাসনী

 


খোলস ছাড়ার আগে

 

(১)

 

মাঘমাস এলে প্রমা আমি চলে যাবো সালঙ্কারা মহুয়ার বনে

মাঘমাস এলে প্রমা আমি স্বমেহনে পারাং এর লাস্যতা ডিঙাবো

 

অপাবৃণু রমণীসারি সহস্রাব্দ প্রাচীন যোগিনীর খোদিত মূর্তি

নাচ দ্যাখে তাড়ি খেয়ে মরদেরা ভোলে আজন্ম দৈন্যক্লেশ

 

শাল সেগুনের ঝরাপাতা থেকে সংক্রমিত পরবের ঘ্রাণ

সভ্য ও ক্রুর ব্যাধ আপন ভেবে বুক পাতে বিপন্ন শামখোল

 

মাঘমাস এলে রূপায়িত বোধিবৃক্ষের কোটরে লুকিয়ে আসি খোয়া তোরঙ্গ

বান্ধবীদের অনাঘ্রাত ভগাঙ্কুরের স্বেদে মিশে আছে দ্বিতীয় কৈশোর

 

খাজনাসর্বস্ব শরীর আমার কাঁটাতার গেঁথে তুমি দ্বিখণ্ড করেছ

 

সূর্যাস্তের পর অরণ্য দ্রবীভূত হয়

শ্বাপদক্ষুরের মতো যত গাঢ় নিকষে

তারও চেয়ে গাঢ়তর কৃত্রিমতায়

ডুবে থাকে গঙ্গাপাড়ের ময়াল বসতি

 

তাদের শরীরে ফুসফুসে উদ্বাস্তুর জড়ুল ছেপে আছে আমৃত্যু

মীরজাফর

মীরজাফর

 

পিতৃলোকের ব‍্যাপ্ত ক্ষুধায় আমাকে অরণ্য ভেবে চালাও কুঠার

গৃহস্থ কি জেনেছে আশ্রয় দিয়েছে যাকে দক্ষিণা চুক্তিতে স্বচ্ছ ডাকাত

 

মাঘমাস এলে প্রমা ধুতুরার পয়োনিধি ঘিরে আসে অনাহতে

 

তুমি পৃথুল বালিহাঁস হয়ে চরো

অনন্ত পিণ্ডের খুদকুঁড়ো ঠ্যালে

 

(২)

 

স্বপ্নের ভিতরে কিছু জ্বলন্ত বরফ

এমনই শৈত্য প্রকোপ বারান্দা ঘিরে

 

রূপালি পোট্রেটে ম্লান মরু পিরামিড

কম্পিত পায়ে এগায় উপোষী শ্রমিক

 

মূর্খের হৃদয়ে কোনো মনুস্মৃতি নাই

ফুল ও কীটের সাম্য গণতন্ত্র ডাকি

 

যাতনায় ডুবে আছি তা যথেষ্ট নয়

বেহালার ছড়ে লেগে তোমার মৌতাত

 

তোমার শরীর ক্লিওপেট্রার আদল

তোমায় জরিপ করে ফ্যারাওর মদ

 

আমি সরে যাই যত ততোবড়ো খাট

পশুকামী প্রেমিকেরা শীৎকারে মাতে

 

যে পথে হেঁটেছে শ্রমিক সভ‍্যতা তাই

কীটের মুকুরে দ্যাখো বিবস্ত্র কুসুম

 

(৩)

"যেরূপ সামান্য নর কামের অধীন।

হইয়া রমণীশক্ত ভোগে চিরদিন।।

সেরূপ শিবের মন আমি ভুলাইব।

যোগ পথ হতে তারে চালিত করিব।।

জগন্ময়ী যোগনিদ্রা যিনি বিষ্ণুমায়া।

রুদ্রাণী শঙ্করী রূপে ধরি নিজ কায়া।।"

 

আমার প্রতিটাবিস্মৃতিমুঠোমুঠো রৌদ্র হয়ে ছড়িয়ে পড়ে বিশুষ্ক গাছের ডালে শূন্য চালায় শৈশবের কর্দমাক্ত ভিজে নুড়ির ওপর বাউলের পদব্রজে যে কাঠের সিঁড়ি জেগে ওঠে তাতে ছাই আর কাটামুণ্ড বসিয়ে আসে যে কেউ তবুও তো কৃমি আর কেন্নোরা জন্ম নেয় সন্ধ্যাপ্রদীপজ্বেলে আসে যে কোনো মা যে বালিকা শসাক্ষেতে নেমে এসে পথভ্রষ্ট হয়েছে তার লাল অলিন্দে স্মৃতি নাই শুধুমাত্র ক্ষীণ জীবনের ঘ্রাণ উঁকি দেয় সেই দৃশ্য থেকেই আমার কামনার সূত্রপাত ফলত এত যে ত্রুটি অনুপল তোমার নিত্যপূজার মন্ত্র ভুলে যাই ওগো মহামায়া ওগো জগজ্জননী সে কি আমারই দোষ যেভাবেরৌদ্রহীনতায় নতজানু মধ্যমা গভীর আশ্লেষে স্পর্শকামী হয় অপ্রোথিত স্বেদ প্রস্ফুটিত হয় আমণ্ড জঙ্ঘায় গবাক্ষের ফাঁদে বিসর্গের প্রত্নাহত রতি 

 

যেভাবেজেনেছোএতদ্সেইভাবে নয় মৈথুন হওয়ার আগে জাগে কুলকুন্ডলিনী বিশেষ জিভের আড় ভাঙা অক্ষর ঠ্যালেতুমি আমি নাভি হয়ে থাকি অবশেষ আলোর কাছাকাছি এক একটি গুটিপোকা জমে কবি জন্মায়

 

যেভাবেমূলাধারেচতুর্দলস্বাধিস্থানেষড়দল মণিপূরকে দশদলঅনাহতেদ্বাদশদল বিশুদ্ধ চক্রে ষোড়শদল আজ্ঞায় দ্বিদল পদ্ম তোমার ধ্যানের মধ্যে জাগে যেভাবেকুন্দস্থানে ইড়া পিঙ্গলা কে সুষুম্না পথে চালিত করতে অপারগ পায়ুকামী কবি অভিধানিকশব্দবিন্যাস ভুলে ওজঃশক্তি উদ্বায়ী অস্তরাগে


 

ভিক্ষা করেছি তক্ষকের বনে

 

আজনমদ্যাখেছো এ ঋতের উৎসব লভ্য করে যায়

জন্মদিনমাত্রে ঘুমন্ত পিতার শিয়রে শোণিতের লিপ্সায়

আপেলের জীগিষা ঠোঁটে পরন্তপ পুত্র এসে দাঁড়ায়

 

হে জীজিবিষাপ্রণম্য রাত্রির দ্বার ভেঙে দাও স্বহাতে

পুরাতন সৌধের কোলে প্রতিম কবি বাসা বেঁধে যায়

অযুত অভিমানে অপ্রেমেমরণোত্তর কীর্তির মোহে

আলোকবর্তিকার সম্মুখে ক্ষণিক ধূম্রবনত আঁখি

বেঁচে থাকে আরণ্যক মদিরাস্ফীতিরমতোসহজাত

নতুবা দিঠিপদ্মেরআড়ালে মাছের সাবলীল ক্রীড়া

নভোতলেওলেরবেঁজিরমতোকাঙ্ক্ষিত অভিমানে

জ্বলেআত্মগ্লানিরনিকটে সহিসের কপট বাবুয়ানা

 

ওগো মহামায়া মাগো বিষ্ণুক্রান্তা আমি সকল দৈন্যের

মাঝে উঠোনের ওষ্ঠে যে নিবিড়বুনোগুল্মলতা দীর্ণ

করে সর্পমৈথুনজাতমৃত্যুহেম ঘুম স্বপ্নের ভিতরে

তদানীন্তন মাছ খেলা করে সেথা তাই খাও তাই খেয়েবাঁচুক

সন্তান আমার দুবেলা অতিরিক্ত কিচ্ছু চাইনি আর

এ শতধা জীবনের থির বাসনায়অকৃতদারের শিরে

পাথরের গিঁটে বাঁধা শস্যের প্রত্নাহত ঘুম

কক্ষচ্যূত নক্ষত্রের শাণিত আঁধার বুকে নির্লিপ্ত হলে

তবুও এ অনাবশ্যক ক্ষুধা ছোঁয়াচেসহানুভূতি

আগাপাশতলাগিলে কেন নাস্তিক্যেরবাড়াদিয়ে গেলে

 

কিংবা কিভাবে ডাকি সংক্রমিতআয়ু আজ্ঞার বিকার

বর্তমান তো কিছু নয় সে আমারই বাকের কর্মকার

স্মার্ত লোকাচার ছেনেআত্মাহন্তারক পরশু গড়ে তোলে

কুণ্ডমুকুর থেকে আরোগ্য বয়ে আনে কুকুয়াখরা

অসদ্ভেষজ স্নেহ মাগুরের আগ্রাসীহাঁয়

আদি রিপুর ভিতর সময়সময়ের ভিতরে শিলা

অবনত সংযোগ তাম্রধ্বজ রাজা উপবিষ্ট হন রাজসূয়ে

তার পারানি বইলে তুমি মা ওগো বর্গভীমা কেবল

আমার বেলাই বাতের ওজর এখন ঊর্ণজালে

ধরা পড়েত্রিলোকস্বামী ব্যাধকে করলোসঙ্ জর্জর

 

এ অঙ্গার কৈবল্য দ্বার এ ঘাট বীজ আনয়ন পথ

জরায়ুর মধ্যে শুয়েমাতৃবিছানায়শুয়ে অবিমিশ্র সন্তান

নিদ্রা ও জাগরণে শুধুই কী দৃশ্যের স্বপ্ন দ্যাখে

পিতা মাতার স্তুতমৈথুনকল্পেকুণ্ঠিতহয়না

সর্বযোনিগামীনির্বিকারীরবিয়োনীর যোনিতে এসে

অক্ষতদৃশ্য অব্যর্থ তাড়নায় পাপ প্রশমন করে

 

আমারই খণ্ডাংশেযোষিততন্ত্র আঠারো অক্ষৌহিনী

আমার সন্তান পৃথিবীর প্রতিটি সফল ধর্ষণের পর

অবধারিত জন্ম পিলপিল উড়ে আসে বাদলা পোকার

অবধারিত মৃত্যুকল্প ভেসে যায় বিধ্বস্ত উৎসবে

কোন পুত্রের মৃত্যুতে পাষাণতর হয়ে ওঠে মা

পাথরকুচির বনে মায়ের জর্দার গন্ধ ভেসে আসে

ক্বচিৎ ধৈর্য্যের শেষে ক্লাইতেমেনেস্ত্রার বুকে

লেলিহান স্বেচ্ছাচারঘিরে ধরে হেডিসের কৃষ্ণ বনানীকে

মিতবাক স্নেহ পড়ে থাকে তার ইতস্তত অযুত নিঃশ্বাস

পড়ে আছে রক্তাক্ত আস্তাকুঁড়ে গৃধ্র ও শৃগালের বাস

হে জীজিবিষাআঁতুড়ঘরেআত্মদহনেঘাটক্রিয়ায়

তাদের ঠোঁটে কি কোনোদিনইমাতৃকল্পেছোঁয়াও নি সুধা

 


 

ঋণারোগ্য বৃশ্চিক

 

পোড়োভগ্নস্তূপের ভালে সার বেঁধে শুয়ে আছে মুমূর্ষু ক্ষেত

কাকভেজাকাশবনছায়ামান্ন দেবতার ভোগ হিম রেত

শুকরেরনখরাহতেগোত্রহারা পূজারীর ভাঙেনি বিকার

পেটে কিছু ছেঁড়াপুঁথিহাড়গোড় মৃত কারখানা অবিরাম

অথপাঁচালিসেরেমাত্র উঠে গেল পরাশর মুকুন্দরাম

সারা গায়ে হুহু ধূলি নস্যাৎ করেছে যে সকল গোধিকাকে

যত আঁশ নগ্ন নেতানো ঊরু পৃথুল রাত সুপ্ত তনিমাকে

অনধিকারী দেগে কিংবা হৈমের লোভে আজনম শ্রম

মানুষের মা অভয়া এও তো পদাতিক হওয়া বৈতনিক শিক্ষার ভ্রম

সকল রিপুর শেষে মারুত সকল পথের শেষে দোজখ

অংশত দৃশ্যের শেষে স্বপ্নময় শৃঙ্গার অহোরাত্র খুঁটে শোক

মায়ের স্নানের দৃশ্যে ছেলের বাহুল্যবোধসহজাত চোখে

যে বিনিদ্র লালসা উপচে ওঠে পুরুষের ছায়া পরিশোধ

এরজন্য ফিরে আসা ঘাস আর খড়েনীড় নির্মাণ জেনেছে

পাখিরা গাছের অবগুন্ঠনে প্রোত ও আশ্রয় কিশোরী গেঁড়েছে

পরাগের আশে হে নৈরাশ্য হে মৃত্তিকা ক্ষমা করো অস্বীকার

 

পাশের বাঁধন ছিঁড়ে বাধা ক্রমে প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠে স্বরে

অথপাঁচালিসেরেমাত্রমুকুন্দরাম উঠে যান ধুম জ্বরে

প্রেমিকার ঊরুমগ্ন যুবকের ঘর্মসিক্ত ঈর্ষী অধিকার

কাব্যের পাতা ভরা সুবর্ণ গোধিকাছাড়ে হুংকার

প্রদর্শিত বীরত্ব ও বিজয়েনুয়েপড়ে সোমত্ত শ্যামাঙ্গিনী

সকল সাক্ষ্য নিয়ে কীর্তি হাটের রাজবাড়ি কাল গর্ভিনী

ডুবে যেতে থাকে বোয়ালের চর্বির খেদে অস্তুতে ডুবে যায়

আধছেঁড়া রুটি হাতে আটকপালেশিশুটিআগ্রাসী নগরীর হাঁয়

আমাদের ভাসমান গৃহ সকল মৃত্যুর শেষে মায়ের স্নান সকল

জন্মের শেষে মায়ের অস্থি সমাহিত হয়অভয়া মঙ্গলে

আরোগ্যের সেতুপ্লুত কপিশ যোনিদ্বারেগলিয়ে বিকল

অংশত লালসার শেষে তামাদির ক্ষুধা সম্মোহিত পরস্ত্রীর

অবগাহন উপন্যাসের নায়িকার মধ্যে অপ্রাপ্ত বান্ধবীর

কষ্টকল্পিত শয্যাদৃশ্যেঅবলীলায়স্বমেহনপ্রবৃত্তিজাত

সত্তা নাই কীট নাই শতাব্দীর উৎসারিত স্মৃতি ক্ষমাহীন

প্রচারিত নুতন পৃথিবীর অবিরল ফাঁস ঋতহীন করে

আমাকে অন্ত্যজ বলো তুমি ক্ষেত্রদ্বার রাক্ষস বাসরে

নৈসর্গিক নয় সংসারমাত্রেসানুপুঙ্খমেদ ও মোহের ঋণ

 

হে নৈরাশ্য হে মৃত্তিকা আরোগ্যের পথ দিয়ে হেঁটে যায়ক্লীব ঘুম

অন্তরালুরগ্রস্তকাম পিতাদের কুরেকুরেখায়


No comments:

Post a Comment